খাদ্যের নামে প্রতিদিন আমরা কী খাচ্ছি? যে খাদ্য আমাদের জীবন বাঁচাবে, সুস্থ রাখবে, সুস্থ-সবল ও হাসি-খুশী রাখবে গর্ভবতী-দুগ্ধবতী মায়েদের এবং আমাদের সন্তানদের। অথচ সেই খাদ্যই এখন আমাদের নানা রকম রোগবালাই এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা নিতে ছুটতে হচ্চে চিকিৎসকের কাছে, আশ্রয় হচ্ছে হাসপাতালে, চিকিৎসা খরচ মেটাতে নিঃস্ব হচ্ছে ব্যক্তি-পরিবার। সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘরে এবং বাইরে প্রতিদিন আমরা খাবার হিসেবে যা খাচ্ছি তা রিতিমতো ভয়-ভীতিকর, আতঙ্কের।
আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিদিন শাকসবজি, ফলমূলসহ সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুব জরুরি। আমাদের প্রতিবেলার খাবার স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপদ ও পুষ্টিকর হওয়ার কথা থাকলেও এদেশে ফসল নির্বাচন, উৎপাদন, উত্তোলন বা সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ইত্যাদি যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারাই আমাদেরকে নানা ভাবে জিম্মি করে রেখেছে। কিন্ত আমরা খাবারের নামে প্রতিদিনই প্রায় বিষ খেয়ে চলেছি। কারণ শাকসবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন কৃষি খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত হাতবদলের নানা পর্যায়ে মেশানো হচ্ছে হরমোনসহ নানা রকম বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার।
যার ফলে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হাঁপানি, ক্ষুদামন্দা, খাবারে অরুচি, অ্যালার্জি, অ্যাজমা, চর্মরোগ, বমি, মাথাব্যথা, খাদ্য বিষক্রিয়া, অরুচি, উচ্চরক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বৃহদান্ত ও ক্ষুদ্রান্তে প্রদাহসহ গর্ভবতী মায়ের শারীরিক নানা জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সৃষ্টি জন্ম নিচ্ছে। এসব বিষাক্ত খাবারে বড়দের চাইতে শিশু ও বৃদ্ধদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি অকালে মৃত্যুর পথে ঢলে পরছে অসংখ্য তরতাজা প্রাণ। শাকসবজি দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও প্রিজারভেটিভ ইথারেল, ফল পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইথারেল ও কার্বাইড এবং মাছের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে অতিমাত্রায় বিষাক্ত ফরমালিন।
অত্যন্ত আশার কথা হলো পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এদেশে ব্যাপকভাবে নিরাপদ খাদ্য পণ্য উৎপাদন হচ্ছে।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদন ও সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে এর উৎপাদন খরচ বেশি ও সঠিক বিপণন ব্যবস্থা না থাকা। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে কম মূল্য, কৃত্রিম প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফসলের বাজার দখল। এসব কারণে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদনকারী কৃষকগণ কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।
অর্গানিক অনলাইন.কম.বিডি -ই-পোর্টালের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের বিপণন ব্যবস্থা পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও ভোক্তাদের স্বাস্থ সুরক্ষায় নিরাপদ ফসল সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অর্গানিক অনলাইন.কম.বিডি প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত নিরাপদ পণ্যসামগ্রী সরাসরি সংগ্রহ করে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। কৃত্রিমতা বিবর্জিত ভেজালমুক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা আমাদের মৌলিক অধিকার। আর এই মৌলিক অধিকার পূরণই অর্গানিক অনলাইন.কম.বিডি-এর অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং নাম গ্রীন হারভেস্ট।
সু-স্বাস্থবান নাগরিকই পারে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার কাজে সহায়তা করতে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য, দেশের জন্য সর্বোপরি সমাজের জন্য কিছু করতে চাইলে সুস্থ থাকাটা জরুরি। ভবিষ্যৎ পরজন্মের জন্য একটি টেকসই ও উন্নত কৃষি ব্যবস্থা তৈরির লক্ষে, দেশের প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে অর্গানিক অনলাইন.কম.বিডি।
নিরাপদ খাবারই পারে শরীরকে সুস্থ রাখতে। আগামী দিনগুলিতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখার জন্য এসব মরণঘাতী বিষ প্রয়োগের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের এখনই সময়। আসুন আমরা আজ থেকে ভেজালযুক্ত খাবার পরিহার করে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলি।